দুই বছর ধরে বন্ধ গলাচিপা সেতুর কাজ, বাসিন্দাদের দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২১-০১-২০২৫ ০৬:৪৫:১৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২১-০১-২০২৫ ০৬:৪৫:১৪ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : বাংলা স্কুপ
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ডাকুয়া ও গজালিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গজালিয়া খালের ওপর নিমার্ণাধীন সেতুটির কাজ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে প্রায় দুই কোটি টাকা বিল উত্তোলন করার পরও সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে। এই অবস্থায় দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা পুরোনো ভেঙে পড়া একটি সেতুর ওপর কাঠ ফেলে চলাচল করছেন। বর্তমানে এই পুরোনো সেতুও নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এদিকে, সেতু নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় পণ্যবাহী ছোট-বড় যানবাহনগুলো দ্বিগুণ পথ ঘুরে চলাচল করছে। অনেক সময় ছোট ছোট ট্রলারে পণ্য নিয়ে নদী যাতায়াত করতে সময় ও অর্থ দুটোই অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। অস্থায়ী নড়বড়ে সেতু পেরিয়ে গজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছে ডাকুয়া ইউনয়নের শিক্ষার্থীরাও।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ডাকুয়া ও গজালিয়া এই দুই ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে সড়ক যোগাযোগর জন্য গজালিয়া খালের ওপর একটি সেতু রয়েছে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে লোহার ভিমের ওপর কাঠের পাটাতন বিছানো সেতুটির ওপর দিয়ে ইটবোঝাই একটি ট্রলি যাওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। সেই থেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে গেদু শরীফ নামে ব্যাক্তি খেয়া নৌকা বেয়ে দুই পাড়ের মানুষদের পারাপার করতেন। খেয়া নৌকায় শিক্ষার্থীদের পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয়রা সেতুর ভেঙ্গে যাওয়া অংশে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে চলাচল করতে থাকে। খালটিতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ এলজিইডি বরাবর আবেদন করেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়ন ও গজালিয়া ইউনিয়নের যাতায়াতের সড়কের সীমান্তবর্তী গজালিয়া খালের ওপর পুরোনো লোহার সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে সেই খালের ওপর নতুন গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। দেশের দক্ষিনাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসণ প্রকল্পের আওয়ায় এই সেতু নির্মাণের কাজ পান বরিশালের বাকেরগঞ্জের মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটিকে সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি। ৭২ মিটার লম্বা ৩ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয়ে চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৯১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণের জন্য দুই বার সময় বাড়িয়ে নেয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত ছিল। এই সময়সীমাও শেষ হয়েছে। কিন্তু সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব পাশে ডাকুয়া ইউনিয়নের আটখালী গ্রামে খালের পাড়ে পাকা পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। আর খালের পশ্চিম পাড়ে গজালিয়ার চর চন্দ্রাই গ্রামের খালের পাড়ে পিলার নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই পিলারের রড বেরিয়ে রয়েছে। অনেকটা মরচে ধরেছে। এদিকে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়েছে। দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পুরোনো নড়বড়ে সেতু দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠিকাদার কবির সিকদার জানান, ইতিমধ্যে সেতুর মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে সেতুর নকশা পরিবর্তন হওয়ায় সংশোধিত প্রকল্লন তৈরি করে পাঠানো কাজ চলছে। এর জন্য সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন প্রকল্লন অনুমোদন হয়ে আসলেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এলজিইডির গলাচিপা উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণকাজের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছে। এই কাজের বিপরীতে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করেছেন এক কোটি ৯৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা। সেতুর নকশা পরিবর্তন হওয়ায় কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। নতুন তৈরি করা প্রকল্লন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ঠিকাদার। তবে দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স